বর্তমান সময়ে বাবা-মা সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে সন্তানেরা ব্যস্ত মোবাইল গেমস, ইন্টারনেট অথবা সামাজিক যোগাযোগ এর মত অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতি মাসে অসংখ্য মানুষ অনলাইনে সার্চ করে থাকে সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার উপায়, বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার দোয়া ও এ ধরণের বিষয় গুলো নিয়ে। কিন্তু বাংলা কনটেন্ট গুলো খুব বেশি মানসম্মত না হওয়ায় আজকে আমি লিখতে বসেছি, আপনি বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি কীভাবে আগ্রহী করে তুলবেন, সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার উপায় গুলো আপনি ও ব্যবহার করতে পারেন।
১। বাচ্চাদের পড়াশোনায় অমনোযোগীতার কারণ নির্ণয় ও তা দূরীভূত করা
আপনার সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার প্রথম পদক্ষেপ হল, এটা নিশ্চিত করা যে পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার কারণ কী?
ক. পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার কারণ
এগুলো সন্তান বা বাচ্চাদের পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার সাধারণ কারণ। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
- মানসিক অস্থিরতা
- মোবাইলের কিংবা ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার
- “পড়ে কি লাভ” এই ধরনের মেন্টালিটি বা উদাসীনতা
- বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া
- কোনো টার্গেট না থাকা
- খাওয়া দাওয়া আর ঘুমে ব্যাঘাত (হোস্টেল বা মেস এ যেটা বেশি হয়)
- ভিডিও গেমস (পাবজি বা ফ্রি ফায়ার)
এছাড়াও, বিভিন্ন বিষয় হতে পারে। যেমনঃ পরিবারে বাবা-মা এর মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকা অথবা প্রেমের সম্পর্ক অথবা অন্য যে কোন কিছু। আপনি বুদ্ধিমত্তার সাথে পর্যবেক্ষণ করে সেটি নিশ্চিত করবেন।
খ. সমাধান
আমাদের দেশে খুবই করুণ কিছু বিষয় পরিলক্ষিত হয়। বাবা-মা বুদ্ধিহীনতার কারণে সন্তানদের সাথে শাসক শাসিতের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই ভুলটি করবেন না। আপনার বক্তব্য কখনও এমন হওয়া উচিত নয় যে, আমি যেটা করতে বলেছি করো। বরং আপনার আপনার তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত যে, তার এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আপনারা তাকে সাহায্য করতে পারেন এবং আপনারাই তার অধিক কল্যাণকামী। এভাবে তার বন্ধু হয়ে উঠুন এবং এই সমস্যা থেকে উত্তরণে তাকে সাহায্য করুন। আপনি যদি এভাবে না করে অনেক বেশি কঠোরতা করেন তাহলে সন্তান আরও বেশি বেয়াড়া হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা যেমন কমবে তেমনি তাদের মাঝে ঐ অন্যায় আরও বেশি বেশি করার প্রবণতা তৈরি হবে।
আরও একটা বিষয় লক্ষ করা যায় যে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা এর সাথে বড় ভাই-বোন-দুলাভাই, খালা-খালু-মামা তারাও এ ধরণের শাসন করতে এগিয়ে আসেন। যার ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয়। আমরা সকলেই জানি যে, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। এই ব্যাপার গুলো এড়িয়ে চলুন। আপনার সন্তানকে পড়াশোনায় আগ্রহী করতে অনাগ্রহী এবং আপনাদের উপর বিরক্ত করে ফেলবেন না।
২। আনন্দদায়ক, আধুনিক ও মজাদার পাঠ উপকরণ
বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার আরেকটি কার্যকরী উপায় হল মজাদার পাঠ উপকরণ প্রদান। প্রকৃতপক্ষে, বাচ্চারা যখন গেমস খেলে, তখন যেমন আনন্দ পায়। পড়া লেখার সময় তেমন আনন্দ পায় না। যার ফলে পড়তে চায় না। এজন্য আপনার সন্তানকে পড়াশোনায় আগ্রহী করতে আনন্দদায়ক ও মজাদার শিক্ষা উপকরণ প্রদান করুন। এধরণের কিছু উপকরণ হলঃ
বাচ্চাদের জন্য মজাদার শিক্ষা উপকরণঃ
বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনযোগী বা আগ্রহী করে তলার অন্যতম আরেকটি মাধ্যম হল তাদের শিক্ষা উপকরণ গুলো মজাদার ও আকর্ষণীয় করা। আধুনিক দেশ গুলোতে অনেক ধরণের আধুনিক শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। তবে, আমি বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কিছু আধুনিক ও মজাদার শিক্ষা উপকরণ এর একটি তালিকা ও বিবরণ তুলে ধরছি।
১। ঝিলমিল জ্ঞান বক্স
এই প্যাকেজে রয়েছে ১৬ টি কার্ড বই। যা ২-৭ বছরের বচ্চাদের জন্য পড়ালেখার একটি আধুনিক ও মজাদার উপকরণ। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে শিশুরা ফ্ল্যাশ কার্ড এর মাধ্যমে পড়বে মজায় মজায়। এটি যারা ব্যবহার করেছেন তারা খুবই ভালো রিভিউ দিয়েছেন। আপনি পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
২। কিডস লার্নিং পেন
শিশুদের পড়ালেখায় আগ্রহী করে তুলতে দারুন আরেকটি শিক্ষা উপকরণ হল কিডস লার্নিং পেন। এটি একটি ডিজিটাল বই ও কলম। যেই স্মার্ট পেনটি আপনি বইয়ের যে বর্ণে বা অংশে স্পর্শ করবেন সেটি পেন এ অডিও মাধ্যমে শোনা যাবে। এতে করে অনেক কঠিন শব্দের উচ্চারণ আপনার বাচ্চা শুনে শুনে শিখে ফেলবে। আবার বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে বর্ণমালা ও বিভিন্ন শব্দের ভুল উচ্চারণ প্রচলিত থাকে। এই স্মার্ট পেন এবং বই এ রয়েছে নির্ভুল উচ্চারণ। এই বই এর মাধ্যমে শিখলে আপনার বাচ্চা শিখবে সঠিক ও শুদ্ধ উচ্চারণ।
কিডস মাস্টার লার্নিং পেন রয়েছে:
- ১৫টি বিশেষ ধরনের বই (Children English – 1,2,3,4,5,6, বাংলা পড়া, আরবী, গণিত, Picture Dictionary, First Conversation, Ganeral Knowledge)
- একটি ডিজিটাল বুক-রিডার পেন,
- রিচার্জ করার ক্যাবল ও এ্যাডাপ্টর সমৃদ্ধ প্যাকেজ
- একটি হ্যান্ডিলিং ফিতা
কলমে এক বছর, সেই সাথে ব্যাটারী এবং চার্জারের জন্য ৬ মাসের ওয়ারেন্টি কার্ড থাকছে এই কিড্স মাস্টার লানিং পেনের প্যাকেজে। এই পণ্যটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে।
৩। ডিজিটাল আর্ট বোর্ড
বাচ্চাদের লেখা লেখি ও অঙ্কন দক্ষতা অর্জনের জন্য একটি স্মার্ট শিক্ষা উপকরণ হল ডিজিটাল আর্ট বোর্ড। এই আর্ট বোর্ডে স্ক্রিন টাচ করে লিখা লেখি ও অঙ্কন করা যায়। খুব ভালো মানের স্মার্ট আর্ট বোর্ড এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশে রকমারি.কম এ কম দামের মধ্যে কিছু পণ্য রয়েছে। আপনি দেখতে পারেন। তবে, অবশ্যই স্মার্ট বোর্ডের কুয়ালিটি নিশ্চিত হয়ে তারপর কিনবেন। আপনার কাছে ভালো লাগবে আশাকরি। বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন।
কিশোরদের জন্য মজাদার শিক্ষা উপকরণঃ
১। বিজ্ঞান বক্স
বিজ্ঞান বক্স হল শিশু কিশোরদের জন্য তৈরি বিশেষ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির একটি বাক্স। প্রতিটি বিজ্ঞানবাক্সে ২০ থেকে ৫০টি এক্সপেরিমেন্ট আছে। প্রতিটি এক্সপেরিমেন্টই বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের সাথে মিলিয়ে করা যাবে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্সটিতে কেবলমাত্র পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের এক্সপেরিমেন্ট রয়েছে। বাকি বিজ্ঞানবাক্সগুলি দিয়ে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন অধ্যায় হাতে-কলমে করে দেখা যাবে। এছাড়াও আছে সায়েন্টিফিক গেম এবং পাজল সম্বলিত স্মার্টকিট।
আপনার সন্তানের বয়স ও ক্লাস অনুযায়ী তার জন্য উপযোগী বিজ্ঞান বাক্সটি নির্বাচন করতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার দোয়া ও ইসলামিক উপায়
পৃথিবীতে সন্তানের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য বাবা মা দোয়া হল সর্বউত্তম সমাধান। মা বাবার দোয়া সন্তানের জন্য বিফলে যায়না। তবে সন্তানকে পড়া লেখায় মনযোগী করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে নিজের মত করে সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। তবে পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য দুয়া করবেন। এক্ষেত্রে নবীদের সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারেন।
হযরত ইব্রাহীম আঃ. আল্লাহর কাছে সন্তানদের জন্য দোয়া করেছেন –
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য নেতা।’ (সূরা ফুরকান-৭৪)
শেষ রাতে উঠে সন্তানের জন্য দোয়া করেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে দোয়া করেন, বিভিন্ন দোয়া কবুলের সময় গুলোতে দোয়া করেন। সকাল-সন্ধ্যায় দোয়া করেন। বিশেষ করে, শুক্রবার আসরের পরে দোয়া করেন। এছাড়াও, কীভাবে আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হয়? কেন দোয়া কবুল হয় না? দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া বইটি পড়তে পারেন। এটি পৃথিবী ব্যাপী জনপ্রিয় একটি বই। যেটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।
সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার উপায় নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। মূলত, একজন ভালো বাবা-মা বা অভিভাবক হয়ে উঠতে হবে। সন্তানের সমস্যা গুলো শনাক্ত করে সমাধান বের করুন। আশাকরি উপকৃত হবেন। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথেও শেয়ার করুন। অন্যকোন পরামর্শ বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট করুন। বিবিধ ব্লগ এর সাথেই থাকুন।