নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ । শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি ও ছক

বিবিধ ব্লগ এর প্রিয় পাঠক, চারিদিকে পত্র-পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি চ্যানেল সহ সবজায়গারই আলোচিত সমালোচিত বিষয় হল নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩। আমারা আজকে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিস্তারিত জানবো। আপনি নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে শিক্ষার সাথে জড়িত। কারণ, হয়ত আপনি নিজে পড়া লেখা করছেন অথবা ভাই বোন পড়া লেখা করছে তাও যদি না হয় আপনার সন্তান পড়া লেখা করছে বা করবে। এছাড়াও আপনি যদি শিক্ষার্থী অথবা শিক্ষক অথবা হাউজ টিউটর বা কোচিং শিক্ষক হয়ে থাকেন। তাহলে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ লেখাটি পড়ে আপনি বিশেষভাবে উপকৃত হবেন বলে আশাকরছি।

শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম কি?

শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম বলতে বোঝায়, শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশ ঘটাতে গৃহীত শিক্ষা পরিকল্পনা। শিক্ষাক্রম এর ইংরেজি শব্দ হল কারিকুলাম। কারিকুলামের বাংলা অর্থ – পাঠক্রম, পাঠ্যক্রম, শিক্ষাক্রম। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাক্রম হিসেবে বেশি ব্যবহারিত হয়। শিক্ষাক্রম কথাটিকে শিক্ষাবিদরা নানা অর্থে ব্যবহার করেছেন। তাই এর স্বীকৃত সংজ্ঞা দেওয়াটা জটিল। এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে শিক্ষাক্রম এর ধারণাও বদলেছে। আপনি এটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে বিস্ময় ফোরাম টি ঘুরে আসতে পারেন।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ কী?

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ হল দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তাল মিলিয়ে চলতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে পারার লক্ষ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত নতুন কারিকুলাম। এই নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যেটি ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে ৬২ টি বিদ্যালয়ে শুরু করার কথা ছিল। ২০২৩ সাল থেকে সারা বাংলাদেশে এন সি টি বি এর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। এবছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়ন হবে। ২০২৪ এ তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হবে। পর্যায়ক্রমে এটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং সম্পন্ন হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এ বই থেকে শুরু করে, শিখন পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি সহ সকল কিছুতে থাকছে আমূল পরিবর্তন। এই পাঠ্যক্রম বা শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছে বিশ্বের পরিবর্তনের গতি, জীবন মুখী শিক্ষার বিষয়, শিক্ষার্থীর মানুষিক বিকাশ ও আনন্দঘন পাঠ প্রদান করা।

কেমন হবে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ পাঠদান পদ্ধতি?

নতুন শিক্ষক্রম এর পাঠদান পদ্ধতি হবে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক। যেটিকে এন সি টি বি বলছে, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি। যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাবেন এবং আনন্দের সাথে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে তার মেধার বিকাশ ঘটবে। চলুন অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতির বিস্তারিত জানি

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি কী?

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন বলতে এমন শিখন কার্যক্রম কে বোঝায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়ে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারে। এই শিখন পদ্ধতিতে ৪ টি পর্যায় বা ধাপ রয়েছে। নিম্নের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি
অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন পদ্ধতি

আরও বিস্তারিত জানতে আপনি নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষক সহায়িকা ডাউনলোড করে নিতে পারেন। যেখান থেকে আপনি উদাহরণের সাহায্যে এই ধাপ গুলো জানতে পারবেন। শিক্ষক সহায়িকা ডাউনলোড করতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন বই ২০২৩ ও শিক্ষক সহায়িকা ডাউনলোড করুন বিনামূল্যে ও এক ক্লিকে।

সপ্তম শ্রেণির নতুন বই ২০২৩ ও শিক্ষক সহায়িকা ডাউনলোড করুন বিনামূল্যে ও এক ক্লিকে।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর শিক্ষা উপকরণ

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর শিক্ষা উপকরণ শুধু মাত্র বই নয়। বই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণ। তার সাথে আরও যুক্ত হবে ভিডিও, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ইউটিউব, গুগল, ভ্রমণ, লাইব্রেরি, শিক্ষক, পিতামাতা, বড় ভাই বোন সহ বিভিন্ন যায়গা, পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ব্যেক্তিই হবে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর শিক্ষা উপকরণ।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর বই

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এ সম্পূর্ণ নতুন রূপে বই প্রণয়ন করা হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দিয়ে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন ও মূল্যায়ন এ গুরুত্বারোপ করায় পাঠ্যবই এ থাকছে না কোন প্রশ্ন বা অধ্যায় শেষে কোন অনুশীলনী। বইতে থাকছে বিভিন্ন কাজের ছক ও নির্দেশনা। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এ অনেকে বিষয়ের নাম পরিবর্তন, কয়েকটি বিষয় বাদ দেওয়া ও নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

থাকছেনা পরীক্ষা তাহলে কীভাবে হবে মূল্যায়ন!

নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এর সবচাইতে বড় পরিবর্তনটি হল মূল্যায়ন পদ্ধতিতে। আমারা বিগত সময়ে পরীক্ষার মাধ্যমেই মূল্যায়ন করতে ও মূল্যায়িত হতে অভ্যস্ত। কিন্তু এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা থাকছেনা এই বিষয়টি শুনেই আমাদের সকলের মাঝে একটি নেতিবাচক চিন্তার উদ্ভব হয়। কারণ আমারা মূল্যায়ন বলতে শুধু পরীক্ষার খাতার নম্বরকেই বুঝি। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এ মূল্যায়ন পদ্ধতিটা শিখন কালীন মূল্যায়ন। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।

শিখন কালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি কি এবং কীভাবে হবে ?

প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোন পরীক্ষা থাকবে না। এই ক্লাস গুলোতে শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিখন কালীন ধারাবাহিকতার ওপর। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে আর ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখন কালীন ধারাবাহিকতার উপর। আর অন্যান্য বিষয় যেমন ধর্ম শিক্ষা, শিল্পকলা ও মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের পূরোটাই মূল্যায়িত হবে শিখন কালীন ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করে।

ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার মাধ্যমে আর বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিখন কালীন ধারাবাহিকতার উপর। আর বাকি পাঁচটি বিষয়ের শতভাগ মূল্যায়ন হবে শিখন কালীন। বিষয়গুলো হলঃ ধর্ম শিক্ষা, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শিল্প ও প্রযুক্তি।

আরও বিস্তারিত জানতে নিচের ছবি গুলো দেখুন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর শিখনকালীন মূল্যায়ন ছক
জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ মূল্যায়ন পদ্ধতি
শিখনকালীন মূল্যায়ন ছক
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ মূল্যায়ন পদ্ধতি
নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ মূল্যায়ন পদ্ধতি এর শিখনকালীন মূল্যায়ন ছক

নবম ও দশম শ্রেণিতে থাকছেনা কোন বিভাগ বিভাজন আর মূল্যায়ন পদ্ধতি হবে

এই নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ এ মূল্যায়ন কে বাদ দেওয়া হয়নি বরং চেষ্টা করা হয়েছিল অভিজ্ঞতা ভিত্তিক, যোগ্যতা ভিত্তিক মূল্যায়নের। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ নিয়ন্ত্রন ও বিধিবিধানের ঘাটতি থাকায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়ার উপক্রম। খুবই তড়িঘড়ি করে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়েই চালু করা হয়েছে এই শিক্ষাক্রম। যার ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে শিখন কালীন ধারাবাহিক বা সামষ্টিক মূল্যায়ন।

7 thoughts on “নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ । শিখনকালীন মূল্যায়ন পদ্ধতি ও ছক

  1. শিখন কালিন মুল্যায়ন ফরম আমার নিচের ইমেল ঠিকানায় দিলে খুশি হব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *